WBCS MAINS QUESTION PAPER BENGALI - সারমর্ম
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2023
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2022
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2021
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2020
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2019
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2018
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2017
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2016
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2015
- WBCS Main Examination Paper - I (Bengali) - 2014
৩। নিম্নলিখিত অংশটির সারসংক্ষেপ করুন ও একটি উপযুক্ত শীর্ষনাম দিনঃ ৪০
অণুবীক্ষণ নামে এক রকম যন্ত্র আছে; তাহাতে ছোট জিনিষকে বড় করিয়া দেখায়; বড় জিনিষকে ছোট দেখাইবার নিমিত্ত উপায় পদার্থ বিদ্যাশান্তরে নির্দিষ্ট থাকিলেও, এ উদ্দেশ্যে নির্মিত কোন যন্ত্র আমাদের মধ্যে সর্বদা ব্যবহৃত হয় না। কিন্ত বিদ্যাসাগরের জীবন চরিত বড় জিনিষকে ছোট দেখাইবার জন্য নির্মিত যন্ত্র্বরূপ। আমাদের দেশের মধ্যে যাহারা খুব বড় বলিয়া আমাদের নিকট পরিচিত, এঁ গ্রন্থ একখানি সম্মুখে ধরিবা মাত্র তাহারা সহসা অতি ক্ষুদ্র হইয়া পড়েন; এবং এই যে বাঙ্গালীত্ব লইয়া আমরা আহোরাত্র আন্দোলন করিয়া থাকি, তাহাও অতি ক্ষুদ্র ও শীর্ণ কলেবর ধারণ করে। দুই চতুম্পার্থসথ ক্ষুদ্রতার মধ্যস্থলে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ধবল-পর্ব্বতের ন্যায় শীর্ষ তুলিয়া দণ্ডায়মান থাকে; কাহারো,সাধ্য নাই যে সেই উচ্চ চূড়া অতিক্রম করে বা স্পর্শ করে।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪0
কুরুক্ষেত্র মহাযুদ্ধের পর ভারতবর্ষ যেন এক মহাম্মশানে পরিণত হইয়াছে। গৃহে গৃহে ত্রন্দনের রোল। কাহারো পুত্র, কাহারো পিতা, কাহারো বা পতি চিরতরে ইহলোক হইতে বিদায় গ্রহণ করিয়াছে -- যাইবার সময় একটি বিদায়ের বাণী, একটু সান্ত্বনার কথাও বলিবার অবসর পায় নাই। যে-সকল প্রাসাদ আনন্দ-কোলাহলে মুখরিত ছিল, আজ সেখানে কে যেন বিষাদের কালিমা লেপিয়া দিয়াছে।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
সহজভাবে আপনার জীবনে প্রাত্যহিক কাজ করে যাওয়ার চেয়ে সুন্দর এবং মহৎ আর কিছু হতে পারে না। মাঠের তৃণ থেকে আকাশের তারা পর্যন্ত তাই করছে; কেউ গায়ের জোরে আপনার সীমাকে অতিক্রম করবার চেষ্টা করছে না বলেই প্রকৃতির মধ্যে এমন গভীর শান্তি এবং অপার সৌন্দর্য বিরাজ করছে। অথচ প্রত্যেকে যেটুকু করছে সেটুকু সামান্য নয় - ঘাস আপনার চুড়ান্ত শক্তি প্রয়োগ করে তবে ঘাসরূপে টিকে থাকতে পারে, শিকড়ের শেষ প্রান্তটুকু পর্যন্ত দিয়ে তাকে রসাকর্ষণ করতে হয়। সে যে নিজের শক্তি লঙ্ঘন করে বটগাছ
হবার নিম্ষল চেষ্টা করছে না, এইজন্যই পৃথিবী এমন সুন্দর শ্যামল হয়ে রয়েছে। বাস্তবিক, বড়ো বড়ো উদ্যোগ এবং লম্বা-চওড়া কথার দ্বারা নয়, কিন্তু প্রাত্যহিক ছোটো ছোটো কর্তব্য-সমাধা দ্বারাই মানুষের সমাজে যথাসম্ভব শোভা এবং শান্তি আছে। বসে বসে হাসঞ্ফাস করা, কল্পনা করা, কোনো অবস্থাকেই আপনার যোগ্য মনে না করা, ইতিমধ্যে সুমুখ দিয়ে সময়কে চলে যেতে দেওয়া-এর চেয়ে হেয় কিছু হতে পারে না। যখন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করা যায়, নিজের সাধ্যায়ত্ত সমস্ত কর্তব্য সত্যের সঙ্গে, বলের সঙ্গে, হৃদয়ের সঙ্গে, সুখ দুঃখের ভিতর দিয়ে পালন করে যাব এবং যখন বিশ্বাস হয় তা করতে পারব, তখন সমস্ত জীবন আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, ছোটোখাটো দুঃখবেদনা একেবারে দূর হয়ে যায়।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
যাঁহারা বাক্যে অজেয়, পরভাষা পারদর্শী, মাতৃভাষা বিরোধী, তাঁহারাই বাবু । যাঁহাদের চরণ মাংসাস্থিবিহীন, শুষ্ক কাষ্ঠের ন্যায় হইলেও পলায়নে সক্ষম; হস্ত দুর্বল হইলেও লেখনী ধারণে এবং বেতন গ্রহণে সুপটু, চর্ম কোমল হইলেও সাগরপার নির্মিত দ্রব্যবিশেষের প্রহার সহিষ্ণু, তাঁহারাই বাবু । যাঁহারা বিনা উদ্দেশ্যে সঞ্চয় করিবেন, সঞ্চয়ের জন্য উপার্জন করিবেন, উপার্জনের জন্য বিদ্যাধ্যয়ন করিবেন, বিদ্যাধ্যয়নের জন্য প্রশ্ন চুরি করিবেন, তাঁহারাই বাবু ।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
প্রথম যুগে একদিন পৃথিবী আপন তপ্ত নিঃশ্বাসের কুয়াশায় অবগুণ্ঠিত ছিল, তখন বিরাট আকাশের গ্রহমণ্ডলীর মধ্যে আপন স্থান সে উপলব্ধি করতেই পারেনি । অবশেষে একদিন তার মধ্যে সূর্যকিরণ প্রবেশের পথ পেল । তখনই সেই মুক্তিতে আরম্ভ হল পৃথিবীর গৌরবের যুগ । তেমনিই একদিন আদ্র হৃদয়ালুতার ঘন বাষ্পাবরণ আমাদের মেয়েদের চিত্তকে অত্যন্ত কাছের সংসারে আবিষ্ট করে রেখেছিল । আজ তা ভেদ করে সেই আলোকরশ্মি প্রবেশ করছে যা মুক্ত আকাশের, যা সর্বলোকের । বহু দিনের যে-সব সংস্কারজরিমাজালে তাদের চিত্ত আবদ্ধ বিজড়িত ছিল যদিও আজ তা সম্পূর্ণ কেটে যায় নি, তবু তার মধ্যে অনেকখানি ছেদ ঘটেছে । কতখানি যে, তা আমাদের মতো প্রাচীন বয়স যাদের তারাই জানে । আজ পৃথিবীর সর্বত্রই মেয়েরা ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে বিশ্বের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়িয়েছে ।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
পৃথিবীতে যাহার দিকে তাকাও দেখিবে— সে নিজের অবস্থায় অসন্তুষ্ট । দরিদ্র কিসে ধনী হইবে সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন ; ধনী চোর-ডাকাতের ভয়ে ত্রস্ত, রাজা শত্রুর ভয়ে ভীত । এককথায় পৃথিবীতে এমন কেউ নাই যে পূর্ণ সুখে সুখী । অথচ কৌতুকের বিষয় এই— পৃথিবী ছাড়িয়া যাইতেও কেহ প্রস্তুত নহে । মৃত্যুর নাম শুনিলেই দেখি মানুষের মন শুকাইয়া যায় । মানুষ যতই দরিদ্র হউক, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, যদি অনাহারে কাটাতেই হয়, পৃথিবী কোনো আরাম আমি যদি ভাগ্যে না থাকে, তথাপি সে মৃত্যুকে চাহে না । সে যদি কঠিন পীড়ায় পীড়িত হয়, যদি শয্যা হইতে উঠিবার শক্তিও না থাকে, তথাপি সে মৃত্যুর প্রার্থী হইবে না । কে না জানে যে শত বৎসরের পরমায়ু থাকলেও একদিন না একদিন মরিতে হইবে ।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
মনুষ্য মাত্রেই পতঙ্গ । সকলেরই এক একটি বহ্নি আছে —সকলেই সেই বহ্নিতে পুড়িয়া মরিতে চাহে, সকলেই মনে করে সেই বহ্নিতে পুড়িয়া মরিতে তাহার অধিকার আছে — কেহ মরে, কেহ কাঁচে বাধিয়া ফিরিয়া আসে । জ্ঞান-বহ্নি, ধন-বহ্নি, মান-বহ্নি, রূপ-বহ্নি, ধর্ম-বহ্নি, ইন্দ্রিয়-বহ্নি — সংসার বহ্নিময় । আবার সংসার কাঁচময় । যে আলো দেখিয়া মোহিত হই – মোহিত হইয়া যাহাতে ঝাঁপ দিতে যাই – কই, তাহাত‘ পাই না । — আবার ফিরিয়া বোঁ করিয়া চলিয়া যাই । কাঁচ না থাকিলে সংসার এতদিন পুড়িয়া যাইত । অনেকে জ্ঞান-বহ্নির আবরণ কাঁচে ঠেকিয়া রক্ষা পায়, সক্রেতিস, গেলিলিও তাহাতে পুড়িয়া মরিল । এই বহ্নির দাহ যাহাতে বর্ণিত হয়, তাহাকে কাব্য বলি । মহাভারতকার মান-বহ্নি সৃজন করিয়া দুর্যোধন পতঙ্গকে পোড়াইলেন, জগতে অতুল কাব্যগ্রন্থের সৃষ্টি হইল । জ্ঞান-বহ্নিজাত দাহের গীত Paradise Lost । ধর্মবহ্নির অদ্বিতীয় কবি সেন্ট পল । ভোগবহ্নির পতঙ্গ অ্যান্টনি ক্লিওপেট্রা । রূপবহ্নির রোমিও ও জুলিয়েত । ঈর্ষা-বহ্নির ‘ওথেলো’ । গীতগোবিন্দ ও বিদ্যাসুন্দরে ইন্দ্রিয়বহ্নি জ্বলিতেছে । স্নেহবহ্নিতে সীতা পতঙ্গের দাহ জন্য রামায়ণের সৃষ্টি ।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
যতটুকু অত্যাবশ্যক কেবল তাহারি মধ্যে কারারুদ্ধ হইয়া থাকা মানব জীবনের ধর্ম নহে । আমরা কিয়ৎ পরিমাণে আবশ্যক শৃঙ্খলে বদ্ধ হইয়া থাকি এবং কিয়ৎ পরিমাণে স্বাধীন ।। আমাদের দেহ সাড়ে তিন হাতের মধ্যে বদ্ধ কিন্তু তাই বলিয়া ঠিক সেই সাড়ে তিন হাত পরিমাণের গৃহ নির্মাণ করিলে চলে না । স্বাধীন চলাফেরার জন্য অনেকখানি স্থান রাখা আবশ্যক । নতুবা আমাদের স্বাস্থ্য এবং আনন্দের ব্যাঘাত হয় । শিক্ষা সম্বন্ধেও এই কথা খাটে, অর্থাৎ যতটুকু কেবলমাত্র শিক্ষা অত্যাবশ্যক তাহারি মধ্যে শিশুদিগকে একান্ত নিবদ্ধ রাখিলে কখনই তাহাদের মন যথেষ্ট পরিমাণে বাড়িতে পারে না । অত্যাবশ্যক শিক্ষার সহিত স্বাধীন পাঠ না শিখাইলে ছেলে ভালো করিয়া মানুষ হইতে পারে না – বয়ঃপ্রাপ্ত হইলেও বুদ্ধিবৃত্তি সম্বন্ধে সে অনেক পরিমাণে বালক থাকিয়াই যায় ।
নিম্নলিখিত অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
অনেকদিন থেকেই লিখে আসছি,জীবনের নানা পর্বের নানা অবস্থায় শুরু করেছি কাঁচা বয়সে- তখনও নিজেকে বুঝিনি । তাই আমার লেখার মধ্যে বাহুল্য এবং বর্জনীয় জিনিস ভুরি ভুরি আছে তাতে সন্দেহ নেই । এ সমস্ত আবর্জনা বাদ দিয়ে বাকি যা থাকে আশা করি তার মধ্যে এই ঘোষণাটি স্পষ্ট যে, —আমি ভালোবেসেছি এই জগৎকে, আমি প্রনাম করেছি এই মহৎকে, আমি কামনা করেছি মুক্তিকে, যে মুক্তি পরম পুরুষের কাছে আত্মনিবেদনে, আমি বিশ্বাস করেছি মানুষের সত্য মহামানবের মধ্যে যিনি সদা জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্ট । আমি আবাল্য অভ্যস্ত ঐকান্তিক সাহিত্যসাধনার গন্ডিকে অতিক্রম করে একদা সেই মহামানবের উদ্দেশ্যে যথাসাধ্য আমার কর্মের অর্ঘ্য, আমার ত্যাগের নৈবেদ্য আহরণ করেছি— তাতে বাইরের থেকে যদি বাধা পেয়ে থাকি অন্তরের থেকে পেয়েছি প্রাসাদ । আমি এসেছি এই ধরণীর মহাতীর্থে— এখানে সর্বদেশ সর্বজাতি ও সর্বকালের ইতিহাসের মহাকেন্দ্রে আছেন নরদেবতা— তাঁরই বেদীমূলে নিভৃতে বসে আমার অহংকার আমার ভেদবুদ্ধি স্খালম করবার দুঃসাধ্য চেষ্টায় আজও প্রবৃত্ত আছি ।
আমার যা কিছু অকিঞ্চিৎকর তাকে অতিক্রম করেও যদি আমার চরিত্রের অন্তরতম প্রকৃতি ও সাধনা লেখায় প্রকাশ পেয়ে থাকে, আনন্দ হয়ে থাকে, তবে তার পরিবর্তে আমি প্রীতি কামনা করে থাকি, আর কিছু নয় । এ কথা যেন জেনে যাই, অকৃত্রিম সৌহার্দ্য পেয়েছি, সেই তাঁদের কাছে যাঁরা আমার সমস্ত ত্রুটি সত্ত্বেও জেনেছে সমস্ত জীবন আমি কী চেয়েছি, কী পেয়েছি, কী দিয়েছি, আমার অপূর্ণ জীবন অসমাপ্ত সাধনার কি ইঙ্গিত আছে ।
মর্তলোকের শ্রেষ্ঠদান এই প্রীতি আমি পেয়েছি এ কথা প্রণামের সঙ্গে বলি । পেয়েছি পৃথিবীর অনেক বরণীয়দের হাত থেকে— তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা নয়, আমার হৃদয় নিবেদন করে দিয়ে গেলাম । তাঁদের দক্ষিণ হাতের স্পর্শে বিরাট মানবেরই স্পর্ষ লেগেছে আমার ললাটে, আমার যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা তাঁদের গ্রহণের যোগ্য হোক ।
যে-কোনো একটি অংশের সারমর্ম লিখুন : ৪০
জগৎ ও জীবনের রহস্য পরমতম সত্য । আধ্যাত্মিক উন্নয়ন ও বিশ্বসৃষ্টির মূলীভূত শক্তির সন্ধানে মানুষ ঈশ্বরের শরণাপন্ন নয় । সৃষ্টির আদিম ক্ষণ থেকে মানুষ এক অতিলৌকিক শক্তিকে ঈশ্বরের মর্যাদায় উন্নীত করেছে । এই শক্তিকে বিশ্বনিয়ন্তা ও অবিনাশী শক্তি বলা হয়েছে । মানুষ মনে করে যে তিনিই বিশ্বস্রষ্টা । তিনি স্বয়ম্ভূ; তিনি বাক্য, মন, ও চক্ষুর অগোচর । মানুষ তাই ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়ায় দেবালয়ে অর্থাৎ মন্দির, মসজিদ, গির্জা প্রভৃতি স্থানে । মানুষ ভাবে যে ঐ সমস্ত স্থানেই ঈশ্বরের বসবাস ।
কিন্তু বাস্তববুদ্ধি দিয়ে বিচার করলে দেখা যায় যে, জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস । ঈশ্বর কে পেতে মন্দির, মসজিদে যাবার প্রয়োজন নেই, জীবকে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা করলেই প্রকৃতভাবে ঈশ্বরের সেবা করা হয় । তথাপি কিছু মানুষ আছে যারা আনুষ্ঠানিক ধর্মাচরণ, পূজা মন্ত্র, আরাধনা ইত্যাদির মাধ্যমে ঈশ্বর লাভে তৎপর হয় । কিন্তু জীবকে অবজ্ঞা করে, মানুষের নারায়ণকে উপেক্ষা করে কখনোই ঈশ্বরের অনুসন্ধান সার্থক হতে পারে না । যুগে যুগে বহু মনীষী জীবসেবাকেই ঈশ্বর প্রাপ্তির চরম উপায় বলে নির্দেশ করে গিয়েছেন । আর্তের সেবা, অসহায়ের উদ্ধার, পীড়িতের শুশ্রূষা, সর্বোপরি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জীবের প্রতি প্রীতি প্রদর্শন করাই ঈশ্বর লাভের শ্রেষ্ঠ উপায় । জীবের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের প্রকাশ । অতএব জীবসেবাতেই ঈশ্বর পরিস্ফুট হয় ।
প্রতিটি মানুষের উচিত অপরকে ভালোবাসা, অপরকে সেবা করা । সেবাই হল ঈশ্বর সাধনার প্রধান পথ । যেদিন মানুষ জীবসেবাকেই সেবাকেই ঈশ্বর সেবার প্রধান পথ হিসাবে বেছে নেবে সেদিন মানুষ প্রকৃত ঈশ্বরের সন্ধান পাবে ।
বস্তুত মানুষের মধ্যে এই যে, দুই স্তরের ইচ্ছা আছে, ইহার মধ্যে একটা প্রয়োজনের ইচ্ছা, আর একটি অপ্রয়োজনের ইচ্ছা । একটা যাহা না হইলে কিছুতেই চলে না তাহার ইচ্ছা, এবং অন্যটা যাহা না হইলে অনায়াসেই চলে তাহার ইচ্ছা । আশ্চর্য এই যে, মানুষের মনে এই দ্বিতীয় ইচ্ছাটি এত প্রবল যে সে যখন জাগিয়া ওঠে তখন সে এই প্রথম ইচ্ছাটাকে একেবারে ছারখার করিয়া দেয় । তখন সে সুখ সুবিধা প্রয়োজনের কোনো দাবিতেই একেবারে কর্ণপাত করে না । তখন সে বলে, আমি সুখ চাহিনা, আমি আরও কিছুকে চাহি, সুখ আমার সুখ নহে, আরই আমার সুখ, তখন সে বলে ভূমৈব সুখম ।
সুখ বলিতে যাহা বুঝায় তাহার ভূমা নাই । ভূমা সুখ নহে আনন্দ । সুখের সঙ্গে আনন্দের প্রভেদ এই যে আনন্দের বিপরীতে দুঃখ নহে, সুখের বিপরীতে দুঃখ । শিব যেমন করিয়া হলাহল পান করিয়াছিলেন, আনন্দ তেমন করিয়া দুঃখকে অনায়াসেই গ্রহণ করে । এমনকি দুঃখের দ্বারাই আনন্দ আপনাকে সার্থক করে, আপনার পূর্ণতাকে উপলব্ধি করে । তাই দুঃখের তপস্যাই আনন্দের তপস্যা ।